আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি ১৯৯৬ সালে আমার বিয়ে হয় প্রি টেস্টের আগে। কোনো প্রেমের বিয়ে না। আমার হাজবেন্ড আমাকে মেলায় দেখেছিলো। ভাল লেগেছে আব্বাকে প্রোপোজাল দিলো আব্বা বিয়ে দিয়ে দিল। আমাকে শুধু জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কাউকে পছন্দ করি কি না? যেহেতু তেমন কিছু ছিলোনা তাই বিয়েটা হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৭ তে এস এস সি পরীক্ষা দেই। ২০০০ সালে আমার বড় মেয়েটা হয়। আমি কিন্তু পড়ালেখা স্টপ করিনি। আমার বাবা মা আমাকে সাহায্য করেছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষার পর আমি উদ্ভিদ বিদ্যায় অনার্স এ এডমিশন নেই। এর মধ্যে ২০০৪ এ অনার্স ফাইনালের সময় আমার ছোট মেয়ে হয়। অনেক কষ্টে প্রাইভেট পড়তে যেতাম। ছোট মেয়েটাকে রেখে চার ঘন্টা পরীক্ষা দিয়েছি। যাওয়া আসা মিলে ৫ ঘন্টা। মেয়েটা জিদ করে কিছুই খেতনা।
Advertisements
আমার হাজবেন্ড অনেক হেল্প করেছে ওই সময়। এর পর মাস্টার্সের সময় হাজবেন্ড চলে যায় মিশনে। আমি হয়ে যাই একা। দুই মেয়ে নিয়ে পরীক্ষা দেয়া প্রাক্টিকাল ক্লাস করা অনেক কষ্টের ছিল। ওদের খাবার দিয়ে বাসায় একা তালা মেরে যেতাম। একজনের বয়স তখন ৬ বছর আর একজন ২বছর। তখনত এত মোবাইল এভেইলেভেল ছিলোনা। কি সময় পার করেছি ভাবতেও এখন ভয় লাগে। কিভাবে এত টুকু মেয়েগুলা একা ছিল। এইভাবে মাস্টার্স পাশ করি। আল্লাহর রহমতে অনার্স ছাড়া সবগুলাতেই প্রথম শ্রেণিতে পাশ করি। আমিও বড় হয়েছি সাথে আমার মেয়েরাও। মাস্টার্স পাশ করার পরেই আমি চাকুরি পেয়ে গেছি। এখন নেভি এ্যাংকরেজ স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা। ২০১৯ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা এওয়ার্ড পেয়েছি। আমার মেয়েরা সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হয়েছে। ওরা এখন মাশা আল্লাহ সব পারে। একজন ভার্সিটিতে প্রথম সেমিস্টারে আরেকজন নাইনে পড়ে।
আমার খুব ভাল লাগে আমার বান্ধবীদের বাচ্চাকাচ্চা এখনো ছোট কিন্তু আমি ওইদিক থেকে ওদের থেকে সিনিয়র হয়ে গেছি। চাকুরির পাশাপাশি শখের বসে ড্রেসের বিজনেস করছি।
এখনকার মেয়েরা বিয়ে করতে চায় না ভাবে পড়ালেখা হবে না। কিন্তু ইচ্ছা থাকলে আর সাপোর্ট থাকলে তা অবশ্যই সম্ভব। আমার হাজবেন্ড, আব্বা আম্মা আর শ্বশুড়বাড়ির ফুল সাপোর্ট পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ, আর নিজের ইচ্ছাতো ছিলোই। এখন সবাই আমাদের তিন বোনের মত বলে, আমার শুনতে ভালই লাগে।
বিয়ে করবে কিন্তু পড়ালেখা ছাড়বে না। চাকুরি না করো এট লিস্ট নিজের জন্য হলেও পড়ালেখা কম্পলিট করো। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
শিক্ষিকা হাসিনা সুলতানা পুষ্পিতা ও তার স্বামী
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস