নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় চলছে শোক। একসঙ্গে পাঁচটি লাশ দাফন সম্পন্নের আগে পরিবারের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছিলেন না কেউ। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ফেচুয়ালেঞ্জী গ্রামের একই পবিরাবের ৬ জনের দাফন সোমবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে সম্পন্ন হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জনকে একসঙ্গে জানাজার নামাজ শেষে দাফন করা হয়েছে। অপর একজনকে শ্বশুর বাড়ি গৌরীপুরের সিধলা গ্রামে দাফন করা হয়। এর আগে একসঙ্গে এত লাশ দেখেননি এলাকাবাসী। ক্ষত-বিক্ষত লাশের মিছিল স্তব্ধ করেছে সবাইকে।
একসঙ্গে দাফন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাওলানা ফারুক মিয়া, তার স্ত্রী মাসুমা আক্তার, তাদের তিনদিন বয়সের নবজাতক শহিদুল্লাহ, নিহত ফারুকের বড় ভাই নিজাম উদ্দিন, আরেক বড় ভাই আজিম উদ্দিনের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম। স্থানীয়রা জানায়, কোনোভাবেই নিহতদের পরিবারের লোকজনের কান্না থামছে না। দুই পুত্র এক কন্যা, নাতীসহ দুই পুত্রবধুকে হারিয়ে নির্বাক মা আয়েশা খাতুন। মুখে কোন কথা নেই। এরই মধ্যে জ্ঞান হারিয়েছেন কয়েক বার। আবার মাকে হারিয়ে সন্তানদের কান্নার আহাজারি থামছে না। মা কাঁদছে সন্তানের জন্য, সন্তান কাঁদছে মায়ের জন্য, ভাই কাঁদছে ভাইয়ের জন্য। ভাতিজা কাঁদছে চাচার জন্য। তাদের সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না প্রতিবেশী-স্বজনরা।
Advertisements
রোববার দুপুরে হাসপাতাল থেকে তারা ছাড়পত্র পেয়ে সিনএজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন পরিবারের অন্যরা। সিদ্ধান্ত ছিল বাড়ি ফিরে উৎসব করে শিশুর আকিকা দেয়া হবে। কিন্তু সে আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়েছে। অটোরিকশাটি নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তারাকান্দা উপজেলার গাছতলা এলাকায় বিপরীত থেকে আসা শাহজালাল পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। পরে শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি লাশগুলো উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নয়ন চন্দ্র দাস জানান, এ ঘটনায় নিহতদের বড় ভাই আজিম উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। চালক পলাতক রয়েছেন। বাসটি জব্দ করা হলেও কাউকে আটক করা যায়নি।
জানাজায় পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ রাজু আহমেদ রাজ্জাক সরকার, আগিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম রুবেল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও আগিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ মৌলভী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফয়জুর সিরাজ জুয়েল, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ তালুকদার ও সানোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। পরে তাদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।